অফিস, বাসা-বাড়ি, কল-কারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, দোকান ইত্যাদি যে কোন স্থাপনা বৈদ্যুতিকরণের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বা সংযোগের পূর্বে ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট টেস্ট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন কাজের সঠিকতা যাচাই ও নিরাপত্তার জন্য এ টেস্ট করা হয়। এ অধ্যায়ে সার্কিটের পোলারিটি টেস্ট, কন্টিনিউয়িটি টেস্ট, পরিবাহীর ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট, আর্থ রেজিস্ট্যান্স টেস্ট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
যে কোন স্থাপনা বৈদ্যুতিকরণের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বা সংযোগের পূর্বে ওয়্যারিং এর যে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়, তাকে ওয়্যারিং টেস্টিং বলে। ওয়্যারিং ত্রুটিবিহীন এবং নিরাপদ হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এ পরীক্ষা বা পরীক্ষাসমূহ করা হয়। কোন ওয়্যারিং কাজ সঠিকভাবে নিয়ম মোতাবেক নির্দিষ্ট স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ত্রুটিবিহীনভাবে সম্পন্ন হয়েছে এই মর্মে নিশ্চিত হতে হলে তা অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সাধারণত কোন ওয়্যারিং কাজ সম্পন্ন করার পর একে দুটি ধাপে পরীক্ষা করার প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়।
সকল কিছু সরেজমিনে দেখে বা পরিদর্শন করে প্রথম ধাপ সম্পন্ন করা হয়, যা সাধারণ পর্যবেক্ষণ এর মাধ্যমে করা হয়। টেস্ট বাতি, যেগার, নিয়ন টেস্টার দিয়ে ওয়্যারিং টেস্ট করা হয়। টেস্ট বাতি দিয়ে করতে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন হয়।
ওয়্যারিং কাজ চলার সময় যে টেস্টগুলো করা হয় সেগুলো হলো-
১। পরিবাহীর কন্টিনিউয়িটি টেস্ট;
২। সুইচের পোলারিটি টেস্ট;
৩। পরিবাহীর ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট।
ওয়্যারিং কাজ শেষ হলে সার্কিটে স্থায়ীভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের পূর্বে যে টেস্টগুলো করা হয় সেগুলো-
১। আর্থ টেস্ট:
২। আর্থের সাথে ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট (কন্ডাক্টর টু আর্থ);
৩। সুইচের পোলারিটি টেস্ট।
বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এর কাজ চলার সময় বা শেষ হলে, ওয়্যারিং ত্রুটিবিহীন এবং নিরাপদ হয়েছে এ বিষয়ে
নিশ্চিত হওয়ার জন্য সার্কিট টেস্ট করা হয়। ওয়্যারিং টেস্ট না করে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিলে কোন কোন ক্ষেত্রে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং সরঞ্জামাদি ও যন্ত্রপাতি পুড়ে যেতে পারে। ওয়্যারিং এর কোথাও শর্ট থাকলে এরূপ ঘটতে পারে। সুতরাং নিশ্চিত করে বলা
যায়, বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং শেষে এটি টেস্ট করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের উপযোগিতা, স্থায়িত্ব, ব্যয় ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করতে হয়। যেমন- সার্কিটের পোলারিটি টেস্ট, কন্টিনিউয়িটি টেস্ট, পরিবাহীর ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স টেস্ট, আর্থ রেজিস্ট্যান্স টেস্ট। নিচে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট নিয়ে আলোচনা করা হলো।
বৈদ্যুতিক বিধি মোতাবেক ওয়্যারিং এ ব্যবহৃত সুইচ ও ফিউজসমূহ শুধু সরবরাহ লাইনের ফেজ তারের সাথে সংযোগ দিতে হবে। কোন অবস্থাতেই সুইচ ও ফিউজসমূহ নিউট্রাল তারের সাথে সংযুক্ত করা যাবে না। সাধারণত দুইভাবে পোলারিটি টেস্ট করা যায়, যেমন- ক) নিয়ন টেস্টারের মাধ্যমে খ) টেস্ট ল্যাম্পের মাধ্যমে। এছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বিহীন বা সরবরাহ লাইনে সংযোগ দেওয়া হয় নাই এমন ওয়্যারিং এ ব্যবহৃত সুইচসমূহের পোলারিটি মেগারের সাহায্যে টেস্ট করা যায়।
ক) নিয়ন টেস্টারের মাধ্যমে পরীক্ষা: এ পদ্ধতির মাধ্যমে সবচেয়ে সহজে এবং দ্রুত সুইচের পোলারিটি টেস্ট করা যায়। এ পদ্ধতিতে সুইচের আওতায় ত্রুটিমুক্ত লোড সংযুক্ত থাকলে সুইচটিকে অফ করে সুইচের যে প্রান্তে বা পয়েন্টে সরবরাহ লাইনের সংযোগ আছে সেখানে নিয়ন টেস্টারের অগ্রভাগ স্পর্শ করিয়ে টেস্টারের অপর প্রান্তের নির্দিষ্ট স্থানে বৃদ্ধাঙ্গুলি স্পর্শ (আর্থ) করলে যদি টেস্টারের নিয়ন ল্যাম্পটি জ্বলে তবে বুঝতে হবে সুইচের পোলারিটি সঠিক আছে। তবে এ ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকার সম্ভবনা থাকে, তাই পরীক্ষা শেষে লোডসমূহ খুলে রেখে পুনরায় পরীক্ষা করলে যদি দেখা যায় এবারও টেস্টার জ্বলছে তবেই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে সুইচের পোলারিটি ঠিক আছে। কখনও ফিউজ বা সুইচ নিউট্রালে সংযোগ করা চলবে না। ফিউজ বা সুইচ নিউট্রালে সংযোগ করলে প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ হবে কিন্তু লাইনের মেরামতের সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
খ) টেস্ট ল্যাম্পের মাধ্যমে পরীক্ষা: টেস্ট ল্যাম্পের একপ্রান্ত আর্থের সাথে এবং অন্য প্রান্তে সুইচ অন করে সুইচের অন্য প্রান্তে স্পর্শ করতে হবে। যদি টেস্ট ল্যাম্প জ্বলে উঠে, তবে বুঝতে হবে পোলারিটি ঠিক আছে। অর্থাৎ সুইচ লাইভ লাইন বা ফেজ তারে সংযোগ আছে। আর বাতি না জ্বললে বুঝতে হবে পোলারিটি ঠিক নাই অর্থাৎ সুইচ নিউট্রালে লাগানো আছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলে Continuity tester বা Avometer অথবা ইনসুলেশন টেস্টিং মেগার ব্যবহার করা হয়। সরবরাহ থাকলে নিয়ন টেস্টারের মাধ্যমেও ফেজ তার শনাক্ত করা যায়।
Read more